ওয়েব ডেস্ক: তীব্র দাবদাহের মধ্যে গত এপ্রিলে ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে হয়েছে দেশবাসীকে। তবে আসন্ন ঈদুল আজহায় আবহাওয়া পরিস্থিতিতে স্বস্তি পাবেন দেশের মানুষ। কারণ দেশব্যাপী গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাতের পরিস্থিতি আগামী তিনদিনেও অব্যাহত থাকার পাশাপাশি কয়েক বিভাগে বৃষ্টিপাত আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। এতে ঈদের নামাজ আদায় করা থেকে পশু কোরবানি দিতে বেগ পেতে হবে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের। এজন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আগেভাগেই সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।
ঈদের দিনসহ আগামী তিনদিনের আবহাওয়া পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলাপ করেছেন আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক। তার দেওয়া তথ্যমতে, বৃষ্টিভেজা ঈদে গরম থেকে স্বস্তি পাবেন দেশবাসী।
ঈদের দিনের আবহাওয়া পরিস্থিতি নিয়ে এ কে এম নাজমুল হক বলেন, ‘আপনি যদি শুধু ঢাকার কথা বলেন, তাহলে আমার মনে হয়, ঢাকার ঈদ বৃষ্টিতেই কাটবে। রাজশাহী বিভাগে বৃষ্টি কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, বাকি বিভাগগুলোতে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়বে। যেমন বুধবার পর্যন্ত খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে বৃষ্টিপাত বেশি থাকবে বলেই আমাদের সিস্টেমে দেখা যাচ্ছে।’
এ আবহাওয়াবিদ বলেন, ‘ঈদের দিন অর্থাৎ ২৯ জুন উপকূলীয় অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা একটু কমলেও দেশের উত্তরের দিকে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বেশি থাকবে। ঈদের দিন রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট ও ঢাকা বিভাগে বৃষ্টি বেশি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে এখন বৃষ্টি থাকলেও ঈদের দিন তা কিছুটা কম হতে পারে। মানে ঈদের দিন দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বৃষ্টিপাত কমে উত্তরের দিকে বাড়বে।’
বৃষ্টির ধরনটা কেমন হবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সিস্টেম পর্যালোচনা করে দেখা গেছে; কিছু কিছু জায়গায় ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। এছাড়া অন্যান্য বিভাগে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের এবং কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বৃষ্টি হতে পারে। আর আষাঢ়ের বৃষ্টি প্রায় সারাদিনই থেমে থেমে হতে পারে।’
এই কয়েকদিনে তাপমাত্রা বাড়বে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে নাজমুল হক বলেন, ‘এ ধরনের কোনো সম্ভাবনা নেই। বরং আগামী দুইদিন অর্থাৎ ঈদের দিন পর্যন্ত দেশের তাপমাত্রা আরও কিছুটা কমে যেতে পারে। যেমন খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দিকে ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমে যেতে পারে। দেশের অন্যান্য জায়গায় তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।’
টানা বৃষ্টিপাতের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে সারাদেশে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। সাগরে একটা লো-প্রেসার এলাকা ছিল। তবে লো-প্রেসার এলাকা বর্তমানে উপকূলে উঠে ভারতের ছত্তিশগড় এলাকায় অবস্থান করছে। আমরা দেশের চার সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছি।’
নাজমুল হক বলেন, ‘মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকলেই বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়ে। বর্তমানে বাতাসের সঙ্গে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। তবে টানা বৃষ্টির ফলে জলীয়বাষ্প অনুভব করা সম্ভব হচ্ছে না। এখন যদি আবহাওয়া শুষ্ক থাকতো তাহলে গরমটা সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকতো। তবে বৃষ্টির কারণে এটা বোঝা যাচ্ছে না। আগামী তিনদিনে বৃষ্টি ছাড়া আপাতত আমরা কোনো পরিবর্তন দেখছি না।’
তবে জুলাই মাসে আবহাওয়ার অবস্থা কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে বলেও জানান এ আবহাওয়াবিদ।
জুলাই মাসে কেমন থাকবে আবহাওয়া
জুলাই মাসে বঙ্গোপসাগরে ১ থেকে ২টি মৌসুমি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। ওই মাসে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের ধারণা করা হচ্ছে চট্টগ্রাম বিভাগে, ৬৫০ মিলিমিটার থেকে ৭৯০ মিলিমিটার। এরপর সিলেট বিভাগে ৫২০ মিলিমিটার থেকে ৬৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে। বরিশাল বিভাগে ৪৬৫ মিলিমিটার থেকে ৫৭০ মিলিমিটার, ময়মনসিংহ বিভাগে ৩৮৫ মিলিমিটার থেকে ৪৭০ মিলিমিটার, রংপুর বিভাগে ৩৮৫ মিলিমিটার থেকে ৪৭০ মিলিমিটার, ঢাকায় ৩৩০ মিলিমিটার থেকে ৪০৫ মিলিমিটার, রাজশাহীতে ৩২৫ মিলিমিটার থেকে ৪০০ মিলিমিটার এবং খুলনা বিভাগে ৩০৫ মিলিমিটার থেকে ৩৭৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাসের কথা জানিয়েছে সংস্থাটি।